আধুনিক ঘোড়ার বিবর্তনের পর্যায়সমূহ আলোচনা এবং আধুনিক ঘোড়ার বিবর্তন বর্ণনা করা হলো :


Evolution Of Horse


ঘোড়ার বিবর্তনের ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায় যে, ক্রমবর্ধমান আকারের সাথে সাথে বিভিন্ন অঙ্গসংস্থানের বেশ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। প্রাধান প্রধান পরিবর্তনগুলো হয়েছে ঘোড়ার পা, দাঁত এবং মুখের আকৃতি ও উচ্চতায়। বিবর্তনের ইতিহায় অনুসারে Hyracotheriam (Eohippus) কে আধুনিক ঘোড়া বলা হয়। এই ঘোড়া থেকে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমানকালের ঘোড়ার Equus এর উদ্ভব ঘটেছে। যেসব পরিবর্তন দ্বারা আধুনিককালের ঘোড়ার উদ্ভব ঘটেছে সেসব নিম্নরূপ:

১. দৈহিক আকার আকৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

২. পা ও পায়ের পাতার দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পাওয়া।

৩. পার্শ্বীয় আঙুলের হ্রাস প্রাপ্তি। 

৪. সংবেদী অঙ্গের উত্তম বিকাশ।

৫. পেষণ দাঁত কর্তৃক অগ্রপেষণ দাঁতকে প্রতিস্থাপন।


৬. মেরুদণ্ড সোজা ও মজবুত হয়েছে। 

৭. মস্তিষ্কের আকার তুলনামূলকভাবে বড় ও জটিল হয়েছে।

৮. ক্ষুরের উৎকর্ষ সাধন হওয়া।

⚪ বিবর্তনের পর্যায়গুলো নিম্নরূপ:



১. ইয়োসিন: এ যুগে যেসব ঘোড়ার সন্ধান পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে Eohippus এবং Orohippus-ই সবচেয়ে পরিচিত আমেরিকান অবস্থ্য।

 ⚪ Eohippus (১ম পর্যায়): উত্তর আমেরিকায় নিম্ন ইয়োসিন স্তরে অশ্ব বিবর্তনের প্রথম রেকর্ডকৃত জীবাশ্ম ছিল Eohippus ১২ ইঞ্চি উঁচু বিড়াল আকৃতির এই প্রাণীটিকে ঘোড়ার প্রকৃত পূর্বপুরুষ হিসেবে ধরা হয়। বিবর্তনবিদদের ধারণা Eohippus পাঁচ আঙ্গুল বিশিষ্ট প্রাণীর উত্তরসুরী, কিন্তু এটির অগ্রপদে ছিল ৪টি এবং পেছনের পায়ে ছিল ৩টি আঙ্গুল। আলনা ও ফিবুলা সম্পূর্ণ পৃথক ছিল এবং দন্তগুলো পেষণ জটিলতার পথে অগ্রসরমান ছিল। ইরা (Era) ইয়োসিনের শেষের দিকে লুপ্ত হয়ে যায়।  

⚪ Orohippus (২য় পর্যায়): Orohippus, Eohippus হতে উদ্ভব হয়েছে। এদের আবির্ভাবের মধ্য ইয়োসিন যুগে। আদি ঘোড়ার সব বৈশিষ্ট্য এর লাভ করেছিল। এদের সম্মুখ পদদ্বয়ে ৪টি আঙ্গুল ছিল। 

⚪ Epihippus (৩য় পর্যায়): এরা আপার ইয়োসিন স্তরের অশ্ব-জীবাশা। পূর্ব অবস্থা হতে এরা ছিল সার্বিক উন্নত। কারণ,তৃতীয় ও চতুর্থ চর্বন দন্ত পরিপূর্ণ পেষণ দন্তে রূপ নেয়। এরা আকারে Orohippus থেকে বৃহৎ।



২. অলিগোসিন:  অলিগোসিন যুগে ঘোড়ার দুটি গণ চিহ্নিত হয়। যথা- Mesohippus Meohippus Meohippus মধ্য ও উর্ধ্ব ওলিগোসিন এবং Mesohippus নিম্নতর ওলিগোসিনে বাস করত। উভয় ধরনের ঘোড়া ইয়োসিন যুগের আদি ঘোড়া হতে উদ্ভূত। এ ঘোড়াগুলো পূর্বের তুলনায় সামান্য অগ্রগতি লাভ করেছিল।

১. এদের পা ও পায়ের পাতা লম্বা ছিল।

২. সবকটি পায়ে সক্রিয় তিনটি আঙ্গুল ছিল।

৩. প্রথম মোলার দাঁত সরল ধরনের ও অন্য তিনটি মোলার দাঁত মোলারিফরম প্যাটার্নে বিন্যস্ত। মোলার দাঁতের ডগা সুবিকশিত ক্রেস্টযুক্ত ছিল।

৪. আকারে প্রায় নেকড়ে বাঘের অনুরূপ ছিল। এটা থেকে ১৭৫৭


 ⚪ Miohippus (৫ম পর্যায়):  এরা আপার অলিগোসিন পর্যায়ের বাসিন্দা। এ গণের ঘোড়া Mesohippus অপেক্ষা আকারে বৃহৎ ছিল। সব ওলিগোসিন ঘোড়ার বিবর্তন উত্তর আমেরিকায় শুরু হয়েছিল এবং মিয়োসিন যুগে অভিপ্রয়াণ করে ইউরোপে পৌছাতে সমর্থ হয়েছিল। 

৩. মায়োসিন যুগ: মায়োসিন যুগে Merychippus Hipparien গণের ঘোড়া টিকে ছিল। পক্ষান্তরে Hypohippus Anchethezium উভয়ই বিলুপ্ত হয়ে যায়।

⚪ Parahippus (৬ষ্ঠ পর্যায়) : নিম্ন মায়োসিনে Parahippus দেখা যায় এবং এটা হতে ঘোড়ার প্রকৃত বিবর্তন ধারার উদ্ভব ঘটে। এটা Miohippus ও Merychippus দশার মধ্যবর্তী দশার প্রতিনিধিত্ব করে।বৈশিষ্ট্য:

 ১. এদের ডায়াস্টোমা সুগঠিত ছিল।

২. তাদের পার্শ্বীয় আঙ্গুল কতকটা হ্রাস প্রাপ্ত ছিল।

এই অবস্থায় দন্তের চূড়ার মধ্যে উপত্যকাগুলো সিমেন্ট দ্বারা পূর্ণ হতে শুরু করল এবং পার্শ্বীয় আদুলগুলো কোনো কোনো প্রজাতিতে

Miohippus এর ন্যায় সুস্পষ্ট থাকলেও অন্যান্য প্রজাতিতে যথেষ্ট ক্ষীণ ছিল।


 ⚪ Protohippus: Merychuppus হতে এটির উৎপত্তি। দুধে দাঁত ও স্থায়ী দাঁত উভয়ই ছিল পরিমিত লম্বা মুকুট সম্বলিত এবং সিমেন্টযুক্ত। বাহুগুলো তিন আঙ্গুলবিশিষ্ট ছিল।

বিবর্তনিক পার্শ্বলাইন: মায়োসিন যুগে দুটি বিবর্তনিক পার্শ্বলাইনের সন্ধান পাওয়া যায়। যথা- Hypohippus,  Hipparion। 


. প্লায়োসিন: এ সময় নতুন নতুন স্থলসংযোগ ঘটলেও একটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি এ গণের ঘোড়া। এদের মধ্যে Hipparion মায়োসিন পর্যন্ত জীবন যুদ্ধে টিকে থাকলেও পরবর্তী পর্যায়ে নিধনযজ্ঞে পর্যবসিত হয়।

 ⚪ Pliohippus (৮ম পর্যায়)। এরা সর্বপ্রথম এক আম্বুলবিশিষ্ট ঘোড়া যা সম্ভবত আপার মায়োসিন স্তরের Protohippus হতে উদ্ভুত। অক্ষিকোটরের সম্মুখভাগে একটি অদ্ভুত গর্ত এবং আধুনিক ঘোড়ার ন্যায় দন্তের পূর্ণতাই এর মূল বৈাশষ্ট্য

আঙুনের চিহ্ন দেখা যায় না। দত্তের ধরন ছিল Pliohippus হতে অনেক উন্নতমানের এবং মাথার খুলি ছিল আধুনিক ঘোড়ার ন্যায়। প্লায়োসিন যুগে দক্ষিণ আমেরিকায় Hippidion নামক একটি বিশেষ অশ্ব জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয় যা Protohippus থেকে উদ্ভুত। খ্রিস্টোসিন পর্যন্ত Hippadion নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে Onohippidium এ রূপান্তরিত হয়।

 ⚪ Equus (১০ম পর্যায়): এরা অশ্ব বিবর্তনের শেষ অবস্থা। উত্তর আমেরিকার ও ইউরোশিয়ায় আপার প্লায়োসিন স্তরে এদের প্রথম দেখা যায়। এদের বাহুগুলো এক আঙুলবিশিষ্ট, দন্তগুলো লম্বাটে, স্তম্ভাকার ও মিনা সমৃদ্ধ ছিল। ৫. প্লিস্টোসিন। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার শ্লিস্টোসিন স্তর হতে ঘোড়ার Equus গণের বেশ কয়েকটি লুপ্ত প্রজাতি উদ্ধার করা

হয়। কিন্তু শীঘ্রই এরা উভয় আমেরিকার মাটি হতে নিশ্চিহ্ন হয়েছিল।

জীবিত অশ্বসমূহ: বর্তমানে গৃহপালিত ও বন্য অবস্থায় আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ায় যথাক্রমে Equus africanas, E. kiang, ও E. asianus এ তিনটি অশ্ব প্রজাতি দেখা যায়। শেষোক্তটি গৃহপালিত অবস্থায় পৃথিবীর সর্বত্র দেখা যায়। মোড়ার প্রধান বিবর্তনিক ধারা উত্তর আমেরিকায় ঘটে এবং পরবর্তীতে পুরাতন পৃথিবী ও দক্ষিণ আমেরিকায় প্রজনন করে।

Leave a Comment